Friday 20 September 2019

শেখ হাসিনার কৌশলে ‘হতভম্ব’ বিএনপি




দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা, প্রিয়া সাহার ঘটনা ইত্যাদি নানা ইস্যুতে সরকার জনরোষ তৈরি হচ্ছিল। সরকার যখন নানা ইস্যুতে কোনঠাসা তখন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে আরও চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছিল বিএনপি। পরপর দুটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা এঁটেছিল বিএনপি। আর সেই আন্দোলন শুরু করার জন্য মাত্র দুই সপ্তাহ আগে দাতা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছিল দলটি। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগও পেশ করা হয়েছিল।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলনের জন্যই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে আন্দোলনের জন্য বিএনপি কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করেছিল। একই সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে নিজেদেরকে সংগঠিত করতে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং বিএনপির কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। অর্থাৎ বিএনপি নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া ও জনগণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। সেসময়ই দাবার ছক উল্টে দিলেন শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ, যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাকে গ্রেপ্তার, ক্যাসিনো বন্ধের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযান এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানে কেবল আওয়ামী লীগের মধ্যেই অস্বস্তি তৈরি হয়নি বিএনপিতেও টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এখন আর বিএনপির আন্দোলনের দিকে নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়েও কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই। এমনকি দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের নতুন নেতা নির্বাচনের মতো বড় খবরটিও মানুষের নজরে আসেনি। সবকিছু ছাপিয়ে শেখ হাসিনার সাহসিকতা এবং আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের দিকেই মানুষের দৃষ্টি। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তার হারানো জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে যেমন সফল হয়েছে , তেমনি বিরোধীদলের পরিকল্পনাকেও তছনছ করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার নেবোয়া সর্বশেষ সাহসি কৌশলে হতবাক হয়ে পড়েছে বিএনপি। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছেন। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, আমরা সর্বাধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট করে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচন করলাম, অথচ এই খবরটিও আড়ালে চলে গেল ক্যাসিনো আভিযানের খবরে।
বিএনপির ওই নেতা আরও বলেন, আমরা যখন নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে সংগঠিত করছি, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছি এবং কিছু কর্মসূচী দিয়েছি তখনই শেখ হাসিনা এই কৌশলে আমাদের বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। এর ফলে জনগণ আমাদের দিক থেকে আরেকবার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে কী হচ্ছে, শেখ হাসিনা কী করছেন তা নিয়েই চর্চা শুরু করে দিয়েছে। দেশের আলোচনার কেন্দ্রে এখন আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান। কাজেই খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার সম্ভাবনা এখন আর নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গযেশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, “শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে বারবার পরাস্ত হচ্ছে বিএনপি। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আমরা যখন আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি এবং আস্তে আস্তে আন্দোলন শুরুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ঠিক তখনই শেখ হাসিনা বোমা ফাটালেন। তিনি নিজ দল আওয়ামী লীগে বোমা ফাটালেন। সারাদেশের জনগণ এখন তাকে বাহবা দিচ্ছে। এরফলে এখন আন্দোলন করলে তার ফল পাওয়া যাবে না। কারণ জনগণের দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের দিকে”।
বিএনপির আরেকজন প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, অভ্রন্তরীণ সমস্যাগুলো মিআটিয়ে আমরা যখন সংগঠিত হচ্ছি, যখন আওয়ামী লীগ থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে, তখনই শেখ হাসিনা এই আইওয়াশটি দিলেন। তিনি বলেন, আসলে এর মাধ্যমে কিছুই পরিবর্তন হবে না। এটা হলো জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল। এই কৌশলের মূল লক্ষ্য বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ করে দেওয়া এবং জনগণের আস্থা অর্জন করা। তিনি মনে করেন, সরকারের যে নাজুক অবস্থা হয়েছিল, এ ঘটনার মাধ্যমে সরকার আগের সেই অবস্থান থেকে নিজেদের উন্নততর অবস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হলো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, একজন নেতার কাছে জনগণ প্রত্যাশা করে যে তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। শেখ হাসিনা সেই কাজটিই করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, ;লের চেয়ে দেশ বড়। এর মাধ্যমে তিনি জনগণের আস্থা পুনর্বার অর্জন করলেন। একই সঙ্গে বিরোধীদলের সিদ্ধান্তহীনতারও জবাব দিলেন।
বিএনপি অন্য একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন যদি শেখ হাসিনার মতো এরকম কৌশল অবলম্বন করতে পারতাম তাহলে জনগণের আস্থা আমরা হারাতাম না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির নেতারা শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের প্রতিক্রিয়া খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তগুলোর প্রসংশা করছে এবং সারাদেশে ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এটা বিএনপির জন্য নেতিবাচক। জনগণ বিএনপির আন্দোলনে আপাতত তেমন সাড়া দেবে না বলেই আভাস পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে বিএনপির আন্দোলন আরও একবার পিছিয়ে গেল বলেই মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

No comments:

Post a Comment