দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা, প্রিয়া সাহার ঘটনা ইত্যাদি নানা ইস্যুতে সরকার জনরোষ তৈরি হচ্ছিল। সরকার যখন নানা ইস্যুতে কোনঠাসা তখন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে আরও চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছিল বিএনপি। পরপর দুটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন করে আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা এঁটেছিল বিএনপি। আর সেই আন্দোলন শুরু করার জন্য মাত্র দুই সপ্তাহ আগে দাতা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছিল দলটি। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগও পেশ করা হয়েছিল।
সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে আন্দোলনের জন্যই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে আন্দোলনের জন্য বিএনপি কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করেছিল। একই সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে নিজেদেরকে সংগঠিত করতে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং বিএনপির কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। অর্থাৎ বিএনপি নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া ও জনগণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। সেসময়ই দাবার ছক উল্টে দিলেন শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অপসারণ, যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাকে গ্রেপ্তার, ক্যাসিনো বন্ধের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়াশি অভিযান এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে শুদ্ধি অভিযানে কেবল আওয়ামী লীগের মধ্যেই অস্বস্তি তৈরি হয়নি বিএনপিতেও টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এখন আর বিএনপির আন্দোলনের দিকে নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়েও কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই। এমনকি দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের নতুন নেতা নির্বাচনের মতো বড় খবরটিও মানুষের নজরে আসেনি। সবকিছু ছাপিয়ে শেখ হাসিনার সাহসিকতা এবং আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের দিকেই মানুষের দৃষ্টি। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তার হারানো জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে যেমন সফল হয়েছে , তেমনি বিরোধীদলের পরিকল্পনাকেও তছনছ করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনার নেবোয়া সর্বশেষ সাহসি কৌশলে হতবাক হয়ে পড়েছে বিএনপি। দলটির একাধিক শীর্ষ নেতা নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছেন। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, আমরা সর্বাধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ভোট করে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচন করলাম, অথচ এই খবরটিও আড়ালে চলে গেল ক্যাসিনো আভিযানের খবরে।
বিএনপির ওই নেতা আরও বলেন, আমরা যখন নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে সংগঠিত করছি, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছি এবং কিছু কর্মসূচী দিয়েছি তখনই শেখ হাসিনা এই কৌশলে আমাদের বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। এর ফলে জনগণ আমাদের দিক থেকে আরেকবার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে কী হচ্ছে, শেখ হাসিনা কী করছেন তা নিয়েই চর্চা শুরু করে দিয়েছে। দেশের আলোচনার কেন্দ্রে এখন আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযান। কাজেই খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার সম্ভাবনা এখন আর নেই।